অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।।
অর্থাৎ যারা আর কারও ওপর নির্ভর না ক'রে কেবল আমার ওপর নির্ভর ক'রে থাকে, তাদের যা কিছু দরকার, সব আমি যুগিয়ে
দিই। ভগবানের এ কথাটা তো আর স্বপ্ন বা কবিকল্পনা নয়।
অন্ন! অন্ন! যে ভগবান এখানে আমাকে অন্ন দিতে পারেন না তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত স্বুখে রাখিবেন-ইহা আমি বিশ্বাস করি না।
আজকাল লোকে 'যোগ্যতমের উদবর্তন' (Survival of the fittest)-রূপ নূতন মতবাদ লইয়া অনেক কথা বলিয়া থাকে। তাহারা মনে করে-
যাহার গায়ের জোর যত বেশী, সেই তত অধিক দিন জীবিত থাকিবে। যদি তাহাই সত্য হইত, তবেপ্রাচীনকালের যে-সকল জাতি
কেবল অন্যান্য জাতির সহিত যুদ্ধ-বিগ্রহে কাটাইয়াছে, তাহারাই মহাগৌরবের সহিত আজও জীবিত থাকিত এবং এই হিন্দুজাতি, যাহারা
অপর একটি জাতিকে জয় করে নাই, তাহারাই এতদিন বিনষ্ট হইয়া যাইত। জনৈকা ইংরেজ মহিলা আমাকে এক সময় বলেন, হিন্দুরা
কি করিয়াছে? তাহারা কোন একটা জাতিকেও জয় করিতে পারে নাই! পরন্তু এই জাতি এখনও ত্রিশকোটি প্রাণী লইয়া সদর্পে জীবিত
রহিয়াছে! আর ইহা সত্য নহে যে, উহার সমুদয় শক্তি নিঃশেষিত হইয়াছে; ইহাও কখন সত্য নহে যে, এই জাতির শরীর পুষ্টির অভাবে
ক্ষয় পাইতেছে। এই জাতির এখনও যথেষ্ট ছরহিয়াছে। যখনই উপযুক্ত সময় আসে, যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই এই জীবনীশক্তি
মহাবন্যার মতো প্রবাহিত হইয়া থাকে।
আদান-প্রদানই প্রকৃতির নিয়ম ; ভারতের যদি আবার উঠিতে হয়, তবে তাহাকে নিজ ঐশ্বর্য-ভান্ডার উন্মুক্ত করিয়া পৃথিবীর সমুদয়
জাতির ভিতর ছড়াইয়া দিতে হইবে এবং পরিবর্তে অপরে যাহা কিছু দেয়,তাহাই গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে ।
আপানার ভাল কেবল পরের ভালয় হয়, আপনার মুক্তি এবং ভক্তিও পরের মুক্তি ও ভক্তিতে হয়-তাইতে লেগে যাও, মেতে যাও, উন্মাদ হয়ে
যাও। ঠাকুর যেমন তোমাদের ভালবাসতেন, আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসি, তোমারা তেমনি জগৎকে ভালবাস দেখি ।
আমাদিগকে বড়বড় কাজ করিতে হইবে, অদ্ভুত শক্তির বিকাশ দেখাইতে হইবে, অপর জাতিকে অনেক বিষয় শিখাইতে হইবে। দর্শন ধর্ম বা
নীতিবিজ্ঞানই বলুন অথবা মধুরতা কোমলতা বা মানবজাতির প্রতি অকপট প্রীতিরূপ সদ্গুনরাজিই বলুন, আমাদের মাতৃভূমি এ-
সব কিছুরই প্রসূতি। এখনও ভারতে এইগুলি বিদ্যমান আছে আর পৃথিবী সম্বন্ধে যতটুকু অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি, তাহাতে আমি এখন
দৃঢ়ভাবে সাহসের সহিত বলিতে পারি, এখনও ভারত এই সকল বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই আশ্চর্য ব্যাপারটি
লক্ষ্য করিয়া দেখুন।
আমাদের জাতের কোনও ভরসা নাই। কোনও একটা স্বাধীন চিন্তা কাহারও মাথায় আসে না-সেই ছেঁড়া কাঁথা, সকলে পড়ে টানাটানি-
আমাদের জাতীয় জীবন অতীতকালে মহৎ ছিল ,তাহাতে সন্দেহ নাই , কিন্তু আমি অকপটভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের ভবিষ্যত আরও
গৌরবান্বিত।
আমাদের দেশের লোকের না আছে ভাব, না আছে সমাদর করিবার ক্ষমতা। পরন্তু সহস্র বৎসরের পরাধীনতার ফলে উৎকট
পরশ্রীকাতরতা ও সন্দিগ্ধ প্রকৃতির বশে ইহারা যে-কোন নূতন ভাবধারারই বিরোধী হইয়া উঠে।
আমাদের দেশের শটকরা নব্বই জনই অশিক্ষিত,অথচ